শিরোনাম
Passenger Voice | ১১:১২ এএম, ২০২৪-০২-০৮
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা নিলাম অযোগ্য ১৩৩ কন্টেনার বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করতে পারছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস প্রায় ১০ মাস আগে ইনসিনেরেটর (উচ্চ তাপমাত্রায় বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্র) স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে চিঠি লিখে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া না মেলায় এসব রাসায়নিক পণ্য কাস্টমসের জন্য বর্তমানে বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানার জিও সাইকেল প্রকল্পে ৪৯ টন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ধ্বংস করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ধ্বংসের তালিকায় থাকা এসব রাসায়নিকের মধ্যে মধ্যে রয়েছে–বিভিন্ন ধরনের কঠিন পদার্থ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ডাইথোনাইট, সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, নাইট্রো গ্লু সলিউশন, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যালস উপাদান, বেভারেজ কনসেন্ট্রেটসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক ধ্বংস করতেও কিছু নিয়ম মানতে হয়। সাধারণ অন্যসব মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য স্কেভেটর দিয়ে বড় গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করা হলেও রাসায়নিকের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ রাসায়নিক পদার্থ মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে ফেলে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শ মেনে রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করতে হয়।
ইনসিনেরেটর স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে লেখা সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০২২ সালের ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বন্দরে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের আলোকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু কাস্টম হাউসের অনুকূলে ধ্বংসযোগ্য পণ্য ধ্বংস করার প্রয়োজনীয় জায়গা ও বাজেট বরাদ্দ না থাকায় ধ্বংস কার্যক্রম চালাতে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং ইয়ার্ডে ধ্বংসযোগ্য পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কন্টেনার পরিবহনকারী যানবাহনের যাতায়তের জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ডের রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ধ্বংস কার্যক্রমের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃক অনুমোদিত ভেন্ডরের সাথে জায়গার মালিকের চুক্তির ভিত্তিতে বেসরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন জায়গায় সীমিত আকারে ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ধ্বংসের জায়গার মালিকানা যাচাই এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণসহ সার্বিক প্রস্তুতিতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। ফলে ধ্বংসযোগ্য পণ্য যথাসময়ে ধ্বংস করা যায় না। এছাড়া নির্দিষ্ট সরকারি জায়গা না থাকায় প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ও বাজেটের অপ্রতুলতার কারণে বিভিন্ন বেসরকারি জায়গায় বর্তমানে ধ্বংস কার্যক্রম করা হলেও কতিপয় অসাধু চক্র ধ্বংস করা পণ্য রাতের অন্ধকারে মাটি খুঁড়ে উত্তোলন করে খোলা বাজারে বিক্রি করার চেষ্টা চালিয়েছে। এ তালিকায় আমদানি নিষিদ্ধ অনেক পণ্যও ছিল। এ অবস্থায় ক্ষতিকর আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য স্থায়ীভাবে ইনসিনিরেটরে পুড়িয়ে ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুকূলে ধ্বংস কার্যক্রমের জন্য স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ সময় সাপেক্ষে একটি বিষয়। তাই চট্টগ্রাম কাস্টমসের অনুকূলে স্থায়ী জায়গা পাওয়ার আগে পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের সুবিধাজনক স্থানে ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইনসিনেরেটর স্থাপনে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান বলেন, জায়গার অভাবে আমরা ২৬৬ কন্টেনার নিলাম অযোগ্য পণ্য ধ্বংস করতে পারছি না। এরমধ্যে ১৩৩ কন্টেনার বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। আমরা ইনসিনেরেটর স্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। আসলে পণ্য ধ্বংসের জন্য আমাদের নিজস্ব একটি জায়গা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থের বিস্ফোরণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা রাসায়নিক ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময় চট্টগ্রাম বন্দরে কী পরিমাণ বিপজ্জনক পণ্য আছে তা খতিয়ে দেখার জন্য ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সেই সময় বন্দরের ভেতরে ২৩ ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যের মজুদ খুঁজে পায়।
প্যা/ভ/ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.